জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমী ফুটবল টুর্নামেন্ট “গোল ফর ক্লাইমেট”। টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর নাম রাখা হয়েছিল সিডর, আইলা, আম্ফান ও টাইফুন। যেগুলো বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম। আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই নামকরণের মাধ্যমে জলবায়ু সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ইয়ুথ অ্যাডাপটেশন ফোরামের উদ্যোগে এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন ও স্থানীয় সংগঠন উত্তরণ-এর যৌথ আয়োজনে সাতক্ষীরার পিটিআই সংলগ্ন পিএন স্কুল মাঠে এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক ফিফা এলিট রেফারি তৈয়ব হাসান শামসুজ্জামান বাবু। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার প্রান্তির পিতা বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্স, উত্তরণের কর্মকর্তা এডভোকেট মুনীর উদ্দিন, উত্তরণের পিসি মোহাম্মদ আলী এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রকল্প সমন্বয়কারী আবু বকর সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ইয়ুথ অ্যাডাপটেশন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল এবং সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি কর্ণ বিশ্বাস কেডি। পুরো আয়োজনের সঞ্চালনায় ছিলেন সহ-সভাপতি মো. হোসেন আলী।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে চারটি দল গঠন করা হয়, যার নামকরণ করা হয় সাতক্ষীরা অঞ্চলে আঘাত হানা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামে- টাইফুন, সিডর, আইলা ও আম্ফান। প্রতিটি দলই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রতীকী বার্তা বহন করে।
টুর্নামেন্টের ফাইনালে ইয়ুথ অ্যাডাপটেশন ফোরামের সভাপতি কর্ণ বিশ্বাস কেডির নেতৃত্বাধীন টাইফুন দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় সহ-সভাপতি মো. হোসেন আলীর আম্ফান দল।
সাধারণত ফুটবল টুর্নামেন্টে ট্রফি বা মেডেল প্রদান করা হলেও এই আয়োজনে ছিল এক অনন্য পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ। বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের খেলোয়াড়দের মাঝে মেডেলের পরিবর্তে বৃক্ষরোপণের জন্য গাছের চারা বিতরণ করা হয়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তৈয়ব হাসান শামসুজ্জামান বাবু বলেন, ফুটবল শুধু খেলা নয়, এটি একটি শক্তিশালী সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যম। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে তরুণদের মাঝে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, খেলার মাধ্যমে যদি আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুতর বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে পারি, তাহলে এটি শুধু বিনোদন নয়, বরং সামাজিক দায়িত্বও পালন করবে।
উত্তরণের কর্মকর্তা এডভোকেট মুনীর উদ্দিন বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার শিকার। তরুণদের এমন উদ্যোগ সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।
সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রকল্প সমন্বয়কারী আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জলবায়ু সংকটের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে এখনই সচেতন হতে হবে। তরুণদের এমন উদ্যোগই পারে সমাজকে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে।
টুর্নামেন্ট দেখতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন মাঠে। স্থানীয় এক দর্শক বলেন, খেলার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির ভাবনাটি সত্যিই ব্যতিক্রমী। এমন আয়োজন আরও হওয়া উচিত।
আরেকজন অভিভাবক বলেন, আমার সন্তানও খেলতে এসেছে। সে শুধু ফুটবল খেলেনি, বরং পরিবেশ রক্ষার গুরুত্বও শিখেছে।
আয়োজকরা মনে করেন, এ ধরনের উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতীকী ও বাস্তবিক দুটো দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
খুলনা গেজেট/এএজে